(অসমাপ্ত প্রেমের গল্প)

 


প্রথম অধ্যায়: প্রথম দেখা

সকালের সূর্য তখন সবে উঠতে শুরু করেছে। শহরের ব্যস্ততা এখনও পুরোপুরি শুরু হয়নি। রাস্তার ধারে ছোট্ট কফির দোকানে বসে আছি আমি, সুমন। এই দোকানটি আমার প্রিয় জায়গা, প্রতিদিন সকালে এখানেই কফি খেতে আসি। আজকের সকালটা কিন্তু একটু অন্যরকম। কারণ আজকে আমার সঙ্গে দেখা হতে চলেছে একজন বিশেষ মানুষের, যার সঙ্গে আমার জীবনের সবচেয়ে অদ্ভুত এবং অসমাপ্ত প্রেমের গল্প শুরু হয়েছিল।

কিছুক্ষণ পরেই এসে উপস্থিত হল সেই বিশেষ মানুষটি। রূপার নাম শুনে হয়তো আপনাদের মনে হতে পারে যে এটি একটি সাধারণ মেয়ে। কিন্তু তার চোখে মুখে এক অদ্ভুত মায়া, যা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে দেয়। আমরা দুইজন কফির অর্ডার দিলাম এবং বসে পড়লাম।

রূপা প্রথমেই হেসে বলল, "সুমন, মনে আছে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল যে দিন?"

আমি একটু হাসলাম এবং বললাম, "কিভাবে ভুলবো রূপা, সেই দিনটা আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন ছিল।"

দ্বিতীয় অধ্যায়: প্রেমের শুরু

আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন। নতুন ক্লাস, নতুন সহপাঠী, সবকিছুই ছিল নতুন এবং অজানা। সেই সময়েই আমি প্রথম রূপাকে দেখি। তার সুন্দর চুল, মিষ্টি হাসি এবং চোখে মুখে এক অদ্ভুত স্নিগ্ধতা আমাকে মুগ্ধ করে।

প্রথম কিছুদিন আমরা শুধু সহপাঠী ছিলাম। ক্লাসের মধ্যে মাঝে মাঝে কথা হত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে শুরু করল। আমরা একসঙ্গে পড়াশোনা করতাম, আড্ডা মারতাম এবং একে অপরের সঙ্গ উপভোগ করতাম। ধীরে ধীরে সেই বন্ধুত্ব প্রেমে রূপান্তরিত হল।

তৃতীয় অধ্যায়: প্রেমের উন্মেষ

একদিন বিকেলে, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হাঁটছিলাম। তখনই রূপা প্রথম আমাকে বলল, "সুমন, আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।"

আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, "বল রূপা, কি বলবে?"

রূপা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, "সুমন, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।"

আমার মনটা আনন্দে ভরে গেল। আমি রূপার হাত ধরলাম এবং বললাম, "রূপা, আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি।"

সেইদিন থেকেই আমাদের প্রেমের গল্প শুরু হয়। আমরা একসঙ্গে সময় কাটাতাম, একে অপরের সাথে নিজেদের স্বপ্ন এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা শেয়ার করতাম। কিন্তু আমরা জানতাম না যে আমাদের এই সুন্দর গল্প একদিন অসমাপ্ত হয়ে যাবে।

চতুর্থ অধ্যায়: সমস্যা এবং বিভক্তি

আমাদের প্রেমের গল্পটা একসময় খুব সুন্দরভাবে চলছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সমস্যার মেঘ আমাদের সম্পর্কের আকাশে জমতে শুরু করল। রূপার পরিবার আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে পারছিল না। তারা চেয়েছিল রূপা অন্য কারো সঙ্গে বিয়ে করুক, যাকে তারা পছন্দ করে।

রূপা এই সমস্যার কথা আমাকে বলেছিল, কিন্তু আমরা তখনো আশা হারাইনি। আমরা ভাবছিলাম সময়ের সাথে সাথে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হতে লাগল। রূপার পরিবারের চাপ ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছিল। রূপা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছিল, এবং আমি দেখতে পাচ্ছিলাম যে সে কতটা কষ্টে আছে।

পঞ্চম অধ্যায়: বিচ্ছেদের সময়

একদিন রূপা আমাকে ফোন করে বলল, "সুমন, আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই। জরুরি কথা আছে।"

আমি একটু চিন্তিত হয়ে বললাম, "কি হয়েছে রূপা? তুমি ঠিক আছ তো?"

রূপা বলল, "হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি। তুমি একটু সময় বের করো, দেখা করতে হবে।"

আমরা আমাদের প্রিয় কফির দোকানে দেখা করলাম। রূপা চুপচাপ বসে ছিল, চোখে জল। আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম, তখনই রূপা বলল, "সুমন, আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই। আমার পরিবার আমাকে অন্য একজনের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু কিছুই করতে পারিনি। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি, কিন্তু আমাদের সম্পর্কের কোন ভবিষ্যৎ নেই।"

আমার মনটা ভেঙে গেল। আমি রূপার হাত ধরলাম এবং বললাম, "রূপা, তুমি যা বলছ সেটা আমি বুঝতে পারছি। আমি জানি তুমি কতটা কষ্টে আছ। কিন্তু তুমি যদি খুশি থাকো, তাহলে আমি সেটাই মেনে নেব।"

রূপা কেঁদে ফেলল, আর আমি শুধু তাকিয়ে রইলাম। সেইদিন আমাদের গল্পের শেষ ছিল, কিন্তু আমাদের ভালোবাসা কখনো শেষ হয়নি।

ষষ্ঠ অধ্যায়: বর্তমান

আজকের দিনে রূপার সঙ্গে এই কফির দোকানে বসে আমরা আমাদের পুরনো স্মৃতিগুলো মনে করছিলাম। আমাদের গল্প অসমাপ্ত হলেও, আমাদের ভালোবাসা আজও আমাদের মধ্যে জীবন্ত। আমরা আজও বন্ধু, এবং সেই বন্ধুত্বই আমাদের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান।

রূপা বলল, "সুমন, আমাদের গল্পটা হয়তো অসমাপ্ত, কিন্তু আমি আজও তোমাকে খুব ভালোবাসি।"

আমি হেসে বললাম, "রূপা, আমি আজও তোমাকে ভালোবাসি। আমাদের গল্পটা হয়তো শেষ হয়নি, হয়তো এটা আমাদের নতুন শুরু।"

আমরা দুইজন কফির কাপে চুমুক দিলাম এবং একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসলাম। আমাদের প্রেমের গল্প হয়তো অসমাপ্ত, কিন্তু আমাদের ভালোবাসা চিরকাল থাকবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url